ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

সাফল্যের সঙ্গে শাখা ব্যবস্থাপনা 

মোঃ আঃ রহিম

প্রকাশিত : ১৭:১৪, ২৪ অক্টোবর ২০২২ | আপডেট: ১২:৫৩, ২ নভেম্বর ২০২২

বেসিক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আঃ রহিম

বেসিক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আঃ রহিম

একটি ব্যাংক শাখা পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনায় যিনি দায়িত্বে থাকেন তিনিই শাখা ব্যবস্থাপক বা শাখা প্রধান। এটি একটি বিরল সম্মানের বিষয় এবং শাখা প্রধান পদটি সর্বাধিক আস্থা, বিশ্বস্ততা, সততা এবং বিশুদ্ধতার প্রতীক। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক বিশ্বস্ত, সৎ, নিষ্কলুষ বিচার বিবেচনা সম্পন্ন ও আস্থাভাজন কর্মকর্তা বা নির্বাহীকেই ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কারণ, শাখা ব্যবস্থাপকের পদবী যাই থাকুক অথবা তিনি যে স্তরের কর্মকর্তাই হোন না কেন তিনি তার ব্যাংক শাখায় অসীম ক্ষমতা ভোগ করেন। একটি চেক যত বড় অংকেরই হোকনা কেন তিনি তা পাশ করা বা অনুমোদন করার ক্ষমতা রাখেন। কারণ, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাকে সে ক্ষমতা প্রদান করা আছে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনুমোদন ক্ষমতার সীমা আছে। কিন্তু চেক পাশ করা, জমা গ্রহণ করা, এফডিআর বা পে-অর্ডার ইস্যু করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। এসব ক্ষেত্রে ক্সবধভাবেই তিনি অসীম ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। 

শাখা ব্যবস্থাপক থেকেই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে উত্তরণ 
সিনিয়র অফিসার পদের একজন ব্যবস্থাপকও ১০০ কোটি টাকার এফডিআর/পেঅর্ডার ইস্যু করার ক্ষমতা রাখেন বা চেক পাশ করতে পারেন। এতে বোঝা যায় তিনি জাতির কত বড় বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব। যে কাগজের বøকে দশ হাজার টাকার এফডিআর ইস্যু করা যায়, ১০০ কোটি টাকা জমা গ্রহণ করে একই বøকে ১০০ কোটি টাকা লিখে তাতে শাখা প্রধান হিসেবে যে․থভাবে স্বাক্ষর করলেই তা ১০০ কোটি টাকার এফডিআর এ পরিণত হয়। তিনি হয়তোবা মাসে বেতন পান চল্লিশ হাজার টাকা। অথচ তার স্বাক্ষরের মূল্য শতকোটি টাকা বা তারও বেশী। তার স্বাক্ষর কত মূল্যবান, তিনি কত মূল্যবান, জাতির নিকট তিনি কত বিশ্বস্ত ও আস্থার প্রতীক। স্বীয় চেতনাবোধ দিয়ে তাকে এর গুরূত্ব এবং তার প্রতি জাতির আস্থা ও মূল্যায়ন উপলব্ধি করতে হবে। একারণেই তাকে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় ব্যাংক শাখার সকল কাজ সদা-সর্বদা পরিদর্শকের ভূমিকায় থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে সতর্কভাবে সম্পাদন করতে হবে। তার দায়িত্ব যেমন বড়, তার প্রাপ্তিও তত বড় ও অপরিসীম। এ দায়িত্বশীলতার কারণেই এক সময়ের ক্ষুদ্র পদধারী গ্রামীন ক্ষুদে শাখার ক্ষুদে ব্যবস্থাপক একসময় দেশব্যাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ অলংকৃত করেন এবং সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে ক্ষমতায়িত হয়ে দেশ সেবার সুযোগ গ্রহণ করেন। 

সেনাবাহিনীর চাকুরিতে অনেক কোর থাকে। মূল কোর হচ্ছে আর্টিলারি কোর বা গোলন্দাজ বাহিনী যারা সরাসরি যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। সেনাবাহিনীর মূল কাজই হচ্ছে দেশ রক্ষা করা এবং জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে হলেও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। এ কারণে সাধারণত আর্টিলারি কোর থেকেই সেনাপ্রধান নিয়োগ দেয়া হয়। ঠিক তেমনিভাবে শাখা প্রধান হচ্ছেন সেনাপ্রধানের মতো। সেনাপ্রধান যেমন দেশমাতৃকার সার্বভে․মত্ব রক্ষার তরে সদা-সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকেন, ব্যাংক শাখার নিরাপত্তা রক্ষা ও সমৃদ্ধি অর্জন এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে শাখা প্রধান অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। শাখা প্রধান কমান্ডিং এরিয়া সার্ভে করে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ করে দেশের অর্থনৈতিক গতিধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শাখা প্রধান সদা সর্বদা সর্বস্ব ত্যাগ করে হলেও শাখার নিরাপত্তা রক্ষা করেন এবং শাখার সার্বিক ব্যবসায়িক উন্নয়নে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আত্মনিয়োগ করেন। এতে হয়তোবা তাকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে অনেক শখ ও আনন্দ বিসর্জন দিতে হয়। কিন্তু বিনিময়ে ব্যাংকও তাকে কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ বা প্রতিদানস্বরূপ উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করার জন্য যথাসময়ে একের পর এক পদোন্নতি প্রদানকরে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেন। এতে তার ত্যাগ ও পরিশ্রম যেমন বেশী থাকে, তার প্রজ্ঞা এবং প্রাপ্তিও ঠিক তেমনিভাবে অভাবনীয়রূপে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবেই তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সার্কুলার পড়ে, ডেস্কে বসে পর্যবেক্ষণমূলক প্রশিক্ষণ বা ফরমাল প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং সর্বোপরি সম্মানিত আমানত গ্রাহক, ঋণ গ্রাহক, সহকর্মী ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে যথাসময়ে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে পেয়ে এক সময় স্বীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদ অলংকরণের জন্য যোগ্য হয়ে উঠেন। রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ঢাকা উত্তর অঞ্চলের সাবেক জোনাল হেড কাজী জামাল উদ্দিন আহমেদ মহোদয় জুলাই, ২০০১ সালে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা সদর হতে ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত প্রত্যন্ত কুশুরা শাখায় আমার চাকরি জীবন শুরুর আড়াই বছরের মাথায় ব্যাংকিং পেশায় প্রথমবারের মতো শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগদানকালে উৎসাহ প্রদান করে বলেন, “শাখা ব্যবস্থাপক হলে প্রমোশন তাড়াতাড়ি হয়।” 

ব্যক্তিগতভাবে মহোদয়ের মাত্র ছয় শব্দের এ উক্তির যথার্থতা পেয়েছি। ২০০১ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নিয়ে ০৬ টি শাখায় টানা ১৩ বছর শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয়টি প্রমোশন পাওনা হয়েছে, ছয়টি প্রমোশনই যথাসময়ে পেয়েছি এবং প্রথম চিঠিতেই পেয়েছি। বিশেষকরে এজিএম ও ডিজিএম প্রমোশনে নিজ ব্যাচের বন্ধুদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছি। ২০১৮ সালে জিএম প্রমোশনে চতুর্থ হয়েছি। জিএম প্রমোশন ভাইভা বোর্ডে মনে হয়েছে শাখা ব্যবস্থাপক না হলে সার্ভিস কাউন্ট হয়না। কারণ কয়টি শাখায় কত বছর ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছি তা অত্যন্ত আগ্রহ ও গুরুত্বের সাথে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। কিন্তু কত বছর চাকুরি করেছি, আর কী কী পদে বা কোন্ কোন্ ডেস্কে কাজ করেছি সে বিষয়ে ততটা গুরুত্বের সাথে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এমনকি কত বছর জোনাল হেড হিসেবে কাজ করেছি বা প্রধান কার্যালয়ের কয়টি বিভাগে বিভাগ প্রধান হিসেবে কাজ করেছি তার চেয়েও অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়কালকে। শাখা ব্যবস্থাপনার ১৩টি বছর কোন্ কোন্ শাখায় কেমন কাজ করেছি, কোন্ শাখায় সবচেয়ে ভাল করেছি, কী ভাল করেছি তা জানতে চেয়েছেন। 

এক ধানমন্ডি শাখার সাফল্য অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরে আমানত ২২ কোটি থেকে ৪০৫ কোটি, মুনাফা ৪০ লক্ষ থেকে ০৩ কোটি টাকা, শাখার ৯০% খেলাপী ঋণ আদায় এবং অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে সাফল্য। এসব কারণে শাখায় অবস্থানকালীন অবস্থায় ডিজিএম এবং পরবর্তীতে অন্যত্র গিয়েও একই শাখার সাফল্য জিএম পদের পদোন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

২০০১ সালে কুশুরা শাখার দায়িত্ব গ্রহণের পরে শ্রদ্ধেয় ডিজিএম কাজী জামাল উদ্দিন আহমেদ মহোদয় আরও বলেন, “ব্যাংকের উন্নয়নের স্বার্থে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। তবে কারও কাছ থেকে কোন সুবিধা গ্রহণ করবেন না। কারণ তারা কোন অন্যায় আবদার করলে তা পালনে অপরাগতা প্রকাশ করলে পরবর্তীতে ঝামেলা ক্সতরী হবে। ডিজিএম হিসেবে আমি আপনার পাশে আছি, থানা প্রশাসন আছে, উপজেলা প্রশাসন আছে, আপনার কোন সমস্যা হবেনা। ব্যাংক অর্থ মন্ত্রনালয়ের প্রতিষ্ঠান। অতএব, সদাশয় সরকার আপনার নিরাপত্তা দেবে। দায়িত্ব নিয়ে সৎভাবে কাজ করবেন, আমাদের সকলের সহযোগিতা পাবেন।” 

এ নির্দেশনা মেনে চলেছি, সকলের সহযোগিতা পেয়েছি এবং শাখা ব্যবস্থাপনায় কখনো কোনরূপ ব্যত্যয় ও বিপত্তি ঘটেনি। 

রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ ইয়াছিন আলী মহোদয় ২৩-০৯-১৯৯৯ তারিখে আমাদের বিআরসি ১৯৯৮ ব্যাচের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সের সমাপনী অধিবেশনে বলেন, “বাবারা তোমরা এখন ঢাকা শহরে থেকো না। ব্যাংকিং শেখার জন্য গ্রামে চলে যাও। আজ থেকে দশ বারো বছর পরে ছেলে মেয়ে মানুষ করার জন্য ঢাকা শহর লাগবে। তখন তোমরা ঢাকা শহরে চলে এসো।” একই দিনে তিনি আরও বলেন, “আমরা চাকুরিজীবীরা বেতনের বাইরে মেলাকিছু (অনেক কিছু) পাই। বাসে উঠলে সীট পাই, বাজারে গেলে ভাল জিনিসটা কিনতে পাই, মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে ভালো ঘরের ছেলে পাই, ছেলের বিয়েতে ভালো ঘরের মেয়ে পাই। অফিসে গেলে ভালো চেয়ার টেবিল পাই। নিজের টাকায় এসব চেয়ার টেবিল কিনতে হয়না। অফিসে ফ্যান চলে, লাইট জ্বলে তবে নিজের পকেট থেকে এসবের জন্য বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়না। এভাবে আমরা চাকুরিজীবীরা বেতনের বাইরে মেলা কিছু পাই।” 

মহোদয়ের এসব নির্দেশনা মাথায় নিয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ড শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে প্রায় আড়াই বছর, কুশুরা শাখা, ধামরাই-ঢাকা, সাটুরিয়া শাখা, মানিকগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ কর্পোরেট শাখা, মানিকগঞ্জ- এই তিনটি শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে ০৮ বছর অর্থাৎ টানা ১১ বছর গ্রামীন বেল্টে কাজ করে বড় সন্তানের গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাই স্কুলে ভর্তির মধ্যদিয়ে ২০০৯ সালে ঢাকা শহরে কর্মজীবনের সূচনা ঘটে। মহোদয়ের উক্ত নির্দেশনা মেনে ব্যাংকিং শেখার সুযোগ হয়েছে এবং জীবন ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে। 

ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা- সততায় সমৃদ্ধ ব্যবস্থাপনা, পরিশ্রান্ত ব্যবস্থাপনা, সদাচারণের ব্যবস্থাপনা এবং সেরা প্রাপ্তির ব্যবস্থাপনা 
ব্যাংকিং পেশায় সততা অত্যাবশক। কারণ, সৎ না হলে তো চাকরিই সঠিকভাবে চলবেনা। এখানে প্রতিটি কাজের রেকর্ড থাকে। যিনি যতটুকু অন্যায় করবেন বা কাজে শৈথিল্য দেখাবেন, তার অসততা বা দায়িত্বের প্রতি অবহেলা বা ভুলভ্রান্তি রেকর্ডেড হয়ে যাবে। ব্যাংকের চাকুরিতে ভুল বলে কিছু নেই। আর্থিক ক্ষতি হয় বলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বার্ষিক রুটিন পরিদর্শনে এসব অনিয়ম উঠে আসবে এবং তিনি চাকরিতে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এ কারণে, শুধু নিজের বড় হওয়ার জন্য নয় বরং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির স্বার্থে এবং নিজের চাকরি রক্ষা করতে হলেও সৎ হতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যথায় দেশের সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হবে। নিজের চাকরি ও ভবিষ্যৎ জীবন এবং পরিবার পরিজনের জীবন জীবিকাও ঝুঁকিতে পড়বে এবং অর্থাভাবে পরিবার পরিজন ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং সামাজিকভাবে সর্বত্র ও সদাসর্বদা হেয় প্রতিপন্ন ও অপদস্থ হতে হবে। 

ব্যাংকের চাকুরীতে যে কেউ যে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হোকনা কেন, সাধারণভাবে মানুষ মনেকরে অসদুপায় অবলম্বনের দায়েই তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। একারণে, বাস্তবে ব্যাংকের চাকরিতে ভুল করা, হেয়ালী বা খামখেয়ালী করা বা দায়িত্বের প্রতি সামান্য ক্সশথিল্য প্রদর্শনের কোন সুযোগ নেই। বরং প্রতিষ্ঠানের সার্কুলারে প্রদত্ত ক্ষমতা ও নির্দেশনা মোতাবেক সদাসর্বদা সঠিকভাবে কাজ করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, শাখা প্রধানের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। সার্কুলার বা পাওয়ার শিডিউলের মাধ্যমে তাকে যেটুকু ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, সেটুকুই তার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাংকের সকল নিয়মাচার মেনে কাজ করলে কারও কোন ভয় নেই বরং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষও সন্তুষ্ট থাকবেন এবং অধঃস্তন সহকর্মী নিরাপদে থাকবে। তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানও নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করে অত্যন্ত সফলতার সাথে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানও তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও মূল্যায়ন করে ক্রমশ উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করবে। 

রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ঢাকা উত্তরাঞ্চলের জোনাল হেড ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ডিজিএম প্রশাসন ও মানব সম্পদ বিভাগ এবং সর্বশেষ ডিএমডি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) জনাব গান্ধী কুমার রায় মহোদয় (বিআরসি ১৯৮৩) সর্বদা বলতেন, “একজন শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে আপনি শাখার সকল কাজেরই ব্যবস্থাপক। শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে সর্ব অবস্থায় এবং সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেন। শাখার সকল কাজকর্মে সৎ ও সতর্ক থাকবেন। যখন কোন কেনাকাটা করবেন, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সততার সাথে কিনবেন। এতে কেউ অনিয়ম করতে পারবেনা এবং আপনারও কোন বিপত্তি হবেনা। রাস্তাঘাটে সময় নিয়ে বের হবেন, ভালো গাড়িতে চলাফেরা করবেন। কাজে কর্মে কোন ধরণের তাড়াহুড়ো করবেন না। শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে আধা-ঘন্টা বেশী সময় নিয়ে হলেও সবকাজ গুছিয়ে প্রয়োজনে সবার পরে বের হবেন। বিনিময়ে ব্যাংক শাখা ভালো চলবে এবং আপনিও ভালো থাকবেন। এই দায়িত্বশীলতার কারণে একসময় অন্যকে ছাপিয়ে আপনিই বড় হবেন।” 

রূপালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি জনাব মোঃ জগলুল করিম মহোদয় ২০০৯ সালে এক শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে বলেন, “ব্যাংকের চাকরি সততার চাকরি। সততার সাথে চাকরি করবেন, ছেলে মেয়ে সুন্দর মানুষ হবে। শুধু টাকা দিয়ে ছেলে মেয়ে মানুষ হবেনা, প্রতিনিয়ত সুপারভিশনও লাগবে। আমার ছেলে জামা কেনার কথা বললে, আমি তাকে এক হাজার টাকা দেই না বরং ছেলেকে নিয়ে মার্কেটে যাই। নিজে ৫০০ টাকায় একটি শার্ট কিনি এবং ছেলেকে ৫০০ টাকার মধ্যে একটি শার্ট কিনে দেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার ছেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে।” 

শাখা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সততা ও সদাচারণ সম্পর্কে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড সিংগাইর উপজেলা শাখা, মানিকগঞ্জ এর ব্যবস্থাপক জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন মহোদয় বলেন (১৯৯৮), “সাভার কলেজের চাকরি ছেড়ে ব্যাংকে আসলেন, সৎ থাকবেন, সবাই আপনাকে বাঘের মত ভয় পাবে।” 

ভালো আচরণ করতে ও সৎ থাকতে পকেটের টাকা খরচ হয়না। তবে সততা, পরিশ্রম ও সদাচারণের মাধ্যমে সবকিছু জয় করা যায়। কথায় আছে, Courtesy costs nothing but purchases everything. সবাই তো শক্তিমত্তা নিয়েই বেঁচে থাকতে ও টিকে থাকতে চায়। সততার কারণে যদি বাঘের মত সাহস ও শক্তিমত্তা নিয়ে টিকে থাকা যায়, তাহলে অসৎ হয়ে দূর্বলভাবে এবং সম্মানহীনতায় চাকরি করায় লাভ কী ? টিপু সুলতানের ভাষায়, “শৃগালের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে একশত বছর বাঁচার চেয়ে সিংহের মতো একঘন্টা বাঁচাই শ্রেয়।” 

বর্তমান চাকরীতে যোগদানের প্রাক্কালে সোনালী ব্যাংক সাভার শাখার কর্মকর্তা জনাব মোঃ আব্দুর রহমান মহোদয় ব্যাংকের চাকরিতে যোগদানে উৎসাহিত করে বলেন (১৯৯৮), “ব্যাংক হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখানে আপনি ইচ্ছা করলে সৎ থাকতে পারবেন এবং এই সততা, সদাচারণ ও কর্মতৎপরতার কারণে আপনি একদিন অনেক বড় হতে পারবেন।” 

জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন ও জনাব মোঃ আব্দুর রহমান উভয়েই আমাদের সিংগাইর মানিকগঞ্জের সন্তান এবং উভয়েই সততা ও সম্মানের সাথে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সততার গুরুত্ব ও বড় প্রাপ্তির যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তা গুরুত্বের সাথে বয়ে বেড়াচ্ছি এবং ঐ একটুখানি সু-পরামর্শ মাথায় নিয়ে সুস্থ ও সুন্দরভাবে প্রতিদিন চলছি। একসময় গ্রামীন এলাকায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন জ্বরেও প্যারাসিটামল, সর্দিতেও তেমনি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবন করানো হতো। ব্যাংকিং পেশা তথা শাখা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সততার ঐ পরামর্শটুকুই সর্ব অবস্থায় প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের মতো অপরিহার্য বলে অনুভূত হয়। ব্যাংকের চাকরিতে টিকে থাকার জন্য এবং ব্যাংকের চাকরি বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও যেকোন মূল্যে সৎ থাকতে হবে। এর অন্যথা হলে চাকরি, সম্মান ও সমৃদ্ধি আকস্মিক ভূমিকম্পে সৃষ্ট ধ্বংসস্তুপের ন্যায় ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। এখানে যে-কারও অনুরোধে বা প্ররোচনায় আবেগ-প্রবণ হয়ে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। এখানে সর্বদাই বিবেক বুদ্ধি, ব্যাংকের নিয়মকানুন ও সার্কুলার এবং সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যাংকারের পরামর্শ নিয়ে সর্বদা প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হবে। একটি কাজেও ভুল করার সুযোগ নেই। জীবন ধ্বংস ও বিপদ সংকুল করার জন্য একটি ভুল বা অন্যায় কাজই যথেষ্ট। মৃত্যুর জন্য যেমন একটি মৃত্যুদণ্ডই যথেষ্ট। 

ব্যাংকের নিয়মনীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সততা ও দায়িত্বশীলতার সাথে শাখা পরিচালনা প্রসঙ্গে রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ ইয়াছিন আলী মহোদয় ২০০২ সালে এক শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে বলেন, “কোন ঋণ হিসাবে যদি লিমিটের বাইরে এক টাকাও পেমেন্ট হয়, তাহলে ধরে নেব এর পঁচিশ পয়সা ম্যানেজারের পকেটে গিয়েছে।” অল্প কথায় সততা রক্ষা করার এক অনন্য নির্দেশনা। 

শাখা প্রধান হিসেবে যোগদানের প্রাক্কালে পরামর্শ গ্রহণকালে সোনালী ব্যাংক সুপ্রীম কোর্ট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও শাখা প্রধান জনাব মোঃ আব্দুর রহিম (পরবর্তীতে ডিজিএম হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত বিআরসি ১৯৭৭, আমার চাচার বন্ধু ও প্রতিবেশী) মহোদয় নিজ চেম্বারে বসে বলেন (জুন ২০০১), “বাবাজি তোমার চাকরি তো আড়াই বছর হয়েছে। আমার চাকরি ছয় মাস পার হতেই আমি ম্যানেজার। দেখ কতবড় চেম্বারে বসে আছি। বিচারপতি মহোদয়গণও যদি কখনও আসেন, তাঁরাও এ চেম্বারেই বসেন। আমি সকলকে সম্মান করি। আমাকেও সবাই সম্মান করেন। হেড অফিসে গেলে আমার বন্ধুরা দুটির স্থলে ৪টি চেয়ার দিতে পারে না। আর আমি কত বড় চেম্বার নিয়ে অফিস করছি। জীবনে লোভ করি নাই, তেমন কিছু করতে পারি নাই। তবে ছেলে-মেয়েদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ভাল ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছি, ভালমত মানুষ করতে পেরেছি। আমার পুত্রবধূও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক। সবমিলিয়ে বেশ ভালোই তো আছি।” 

শাখা প্রধান হিসেবে কুশুরা শাখায় যোগদানকালে সাভার কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল এবং আমার সরাসরি শিক্ষক অর্থনীতিবিদ জনাব মোঃ ইলিয়াস হোসেন মহোদয় উপদেশ দিয়ে বলেন (২০০১), “অফিস প্রধান হিসেবে কাজ করবে। তবে কখনো অর্থের লোভ করবেনা। একদিন প্রমোশন পেয়ে পেয়ে বড় হবে, বড় বেতনে চাকরি করবে। এভাবে সৎভাবে ঘরে বড় টাকা আসবে। তবে কোনক্রমেই অন্যায় পথে নয়।” 

ব্যবস্থাপনা কী ? 
সাধারণ ভাষায় ব্যবস্থাপনা অর্থ চালিয়ে নেয়া। দক্ষ হাতে চালানো হলে তা দক্ষ ও সমৃদ্ধ ব্যবস্থাপনা, দূর্বল নেতৃত্বে চললে তা দূর্বল ব্যবস্থাপনা। বাস্তবে ব্যবস্থাপনা শব্দটি ব্যাপক। ইহা অনুধাবনের বিষয়। একে এক কথায় সংজ্ঞা আকারে প্রকাশ করা কঠিন। আধুনিক ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- ‘‘Management comprises planning, organi“ing, staffing, leading or directing and controlling an organi“ation (a group of one or more people or entities) or effort for the purpose of accomplishing a goal.’’

ব্যবস্থাপনা বলতে একক কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বুঝায়না। বরং এটি একটি সামগ্রিক বিষয়। যেমন বলা হয়ে থাকে “When one person dreams that is a dream only but when the entire nation dreams that is not a dream. It begins a nwe reality”. কোন একজনের স্বপ্ন নিছক স্বপ্ন বলে মনে হয়। উন্নয়ন ও বাস্তবমূখী একটি কাঙ্খিত স্বপ্ন যখন সকলে মিলে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার আলোকে একযোগে বাস্তবায়নে প্রয়াসী হয়, তখন স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকেনা বরং তা বাস্তবে রুপ লাভ করে বা বাস্তবায়িত হয়। এর জ্বলন্ত বা বাস্তব প্রমান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ব্রিটিশ বিদায়, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাভাষার বিজয় তথা ২১শে ফেব্রæয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উত্তরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তথা ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যূদয়। 

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার কৃতিসন্তান (গ্রাম জায়গীর, ইউপি ধল্লা) ইউএসএ প্রবাসী বাংলাদেশী সফটওয়্যার বিজ্ঞানী সাইফ ইসলাম এর মতে (১৯৯৩) “Bangladesh is not a poor country but poorly managed country”. এ সংজ্ঞা বিশ্লেষণে বোঝা যায় একটি দেশ, জাতি, অর্থনীতি, পরিবেশ বা অবয়বের সমৃদ্ধি বা অবনতি শুধুই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সমৃদ্ধি বা কৌলিন্যের উপর নির্ভরশীল। যে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সমৃদ্ধ, উন্নয়নমুখী ও বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে যতবেশী উৎসাহী ও তৎপর, সেই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ততবেশী সমৃদ্ধ ও গতিশীল। 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- মানিকগঞ্জ জেলার ক্সকট্টা গ্রামে, প্রশিকার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং সুবিন্যস্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে দেশ বিদেশের লোকজন স্বাচ্ছন্দে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রদান করে থাকেন। পাশাপাশি এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর ঘিরেই রয়েছে কৈট্টা গ্রামের এলোমেলো, অবিন্যস্ত ও দৃষ্টিনন্দনহীন বাড়িঘর ও অবয়ব। একই গ্রামে পাশাপাশি অবস্থানে দুটি বিপরীত ধর্মী চিত্র- একটি সমৃদ্ধ ও সুবিন্যস্ত, অপরটি দারিদ্র্যক্লিষ্ট ও অবিন্যস্ত। এ ব্যবধানের মূলে রয়েছে ব্যবস্থাপনার ব্যবধান। ব্যবস্থাপনা উন্নত তাই প্রশিকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উন্নত। ব্যবস্থাপনা অনুন্নত তাই পাশাপাশি অবস্থান করেও কৈট্টাবাসী অনুন্নত। প্রতিনিয়ত পাশাপাশি অবস্থান করেও অনুন্নতই থেকে যাচ্ছে। কারণ, সমৃদ্ধ ব্যবস্থাপনার সাথে তাদের কোন যোগাযোগ হয়নি। সমৃদ্ধ হওয়ার ব্যবস্থাপত্র তাদের হাতে নেই বা তাদের নিকট পেঁ․ছেনি বা সরবরাহ করা হলেও তা কাজে অনুসরণ করা হয়নি। 
অর্থনীতিবিদ রাগনার নার্কস এর মতে “A country is poor because it is Poor” সংক্ষিপ্ত এ উক্তির ব্যাখ্যায় জানা যায়, একটি দরিদ্র দেশ তার সকল কর্মকাণ্ডে দরিদ্র, বিশেষ করে চিন্তার রাজ্যে দরিদ্র। এ কারণে, তারা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ক্রমাগত দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। দেশবরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর ভাষায় “A man is big as much as he can think. A man can think as much as he can imagine and finally a man can imagine as much as he can dream” অর্থাৎ মানুষ তার চিন্তার সমান বড় এবং একজন মানুষ যতটুকু স্বপ্ন দেখার সামর্থ্য রাখে সে ততখানি পর্যন্ত কল্পনা ও চিন্তা করে বড় হতে পারে, সমৃদ্ধ হতে পারে। স্বপ্ন ও চিন্তা যত বড়, ব্যবস্থাপনা তত বড় ও গতিশীল। স্বপ্ন ও চিন্তা যত ছোট, ব্যবস্থাপনা তত অসমৃদ্ধ ও স্থবির। পরিবার বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিই আসল। দৃষ্টিভঙ্গি যাদের বড়, দূরদৃষ্টিতে যারা সমৃদ্ধ তারাই বড় বড় সাফল্যে নেতৃত্ব দিতে পারে। 

রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি কারেন্ট চার্জ) জনাব মোঃ জগলুল করিম মহোদয় আরবিটিএ-তে ‘শাখা ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক ট্রেনিং সেশনে বলেন (২০০৯), “ব্যবস্থাপনা বিষয়টি কিভাবে বোঝাব? আমি স্বাধীনতার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা ছয় ভাইবোন পড়াশুনা করি। বাবা মাসে তিনশত টাকা বেতন পান। আমাকে টিউশনি করতে হবে, খুব ভাল ফুটবল খেলি, ফার্স্ট ডিভিশনে ফুটবল খেলতে হবে এবং সর্বোপরি ভালো রেজাল্ট করতে হবে। তিনটি কাজই আমাকে করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড়ভাই আমাকে বললেন, তুমি একাউন্টিং এ পড়োনা কারণ অনেক সময় নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে। তুমি এতে ফুটবল খেলতে পারবেনা, টিউশনি করার সময় পাবেনা এবং ভালো রেজাল্ট করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তুমি বরং ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ো। এতে তুমি টিউশনি করতে পারবে, ফুটবল খেলতে পারবে এবং ভালো রেজাল্টও করতে পারবে। আমি একাউন্টিং ছেড়ে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে লেখাপড়া করলাম, টিউশনি করলাম, ফুটবল খেললাম এবং ভালো রেজাল্ট করলাম। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং কাজ চালিয়ে যাওয়া। ইহাই ম্যানেজমেন্ট। পরবর্তীতে সোনালী ব্যাংকে চাকরি পেলাম। কঠোর পরিশ্রম করেছি, সততা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি বুঝে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রূপালী ব্যাংকের জিএম হলাম, ডিএমডি হলাম। চাকরিজীবী বাবার আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও আমরা ছয় ভাই বোন প্রত্যেকেই সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। আজ আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানে সেরা।” 

ব্যাংক ব্যবস্থাপনা 
বেঞ্চে বসে লেনদেন থেকেই ব্যাংকের উৎপত্তি। যুগযুগ ধরে নতুন নতুন ফাইনান্সিয়াল প্রোডাক্টস বা সেবা যুক্ত হয়ে বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ভিন্নমাত্রায় রূপ নিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা শুধু অর্থ লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সমগ্র অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রতিটি বিষয়ে ব্যাংকিং খাত বা ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা নিজেকে নিয়োজিত ও সংশ্লিষ্ট করেছে। ব্যাংকিং খাত আজ রাষ্ট্র শক্তির হৃৎপিন্ড। হৃৎপিন্ড যেমন রক্ত পাম্প করে সমস্ত শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন ও খাদ্য নির্যাস পেঁ․ছে দিয়ে জীব দেহকে সচল ও জীবন্ত রাখে, ঠিক তেমনিভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর নিকট থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে দেশের সামগ্রিক অর্থ‣নতিক কর্মকান্ডে অর্থ বা মূলধন যোগান দিয়ে অর্থনীতি সচল ও জীবন্ত রাখে এবং ক্রমশঃ বেগবান ও সম্প্রসারিত করে। রক্ত শুন্যতায় যেমন মানুষ মারা যায়, অর্থশুন্যতায় তেমনি অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়, মারা যায়। রক্তশুন্য রোগীকে অন্যের রক্ত সংগ্রহ করে বাঁচতে হয়। অর্থাভাবগ্রস্থ অর্থনীতিতে ব্যাংক ব্যবস্থা অর্থের যোগান দিয়ে দূর্দিনে দেশরক্ষা করে। কোভিড-১৯ এর দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ব্যাংক ব্যবস্থা দেশরক্ষায় এবং দেশের মানুষের জীবন রক্ষায় দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর নিকট হতে সংগৃহিত লক্ষ কোটি টাকা আমানত স্বল্প সুদে দেশের দেশের কৃষি, শিল্প ও ব্যবসাখাতে ঋণ হিসেবে যোগান দিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল ও গতিশীল রেখেছে তথা দেশ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। বহিঃ শত্রæর আক্রমণ থেকে দেশের সেনাবাহিনী যেমন জীবন বাজী রেখে যুদ্ধকরে দেশ রক্ষা করে, চিকিৎসকগণ কোভিড-১৯ মহামারীতেও ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। ব্যাংকার অর্থশূন্য ও ভগ্ন অর্থনীতিতে অর্থের যোগান দিয়ে অর্থনীতি তথা দেশ সচল ও সজীব রাখে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অসংখ্য ডাক্তার ও নার্স এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি অসংখ্য ব্যাংকার সেবারত অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন। ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য সমাজে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ ও অতি মর্যাদাশীল হয়ে উঠছে। সূধী সমাজে এ কারণে বলতে শোনা যায়, 
“হয় ব্যাংকে না হয় র‌্যাংকে।” 
এ উক্তি ব্যাংকারের গুরুত্ব ও সম্মান উভয়ই বাড়িয়েছে।

লেখকঃ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা। 

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি